Thursday 27 January 2022

মেলানকোলির রাত

আজ থেকে দু'বছরেরও বেশি আগে, মানে এই মৃত ব্লগে শেষ পোস্টের মাসদুয়েক পরে, আমি একটা বইয়ের ভূমিকা লিখতে বসেছিলাম।

বইয়ের লেখক আমার ভাই। তার লেখা গল্পগুলো পড়তে গিয়ে একটা অব্যক্ত কষ্ট বুকের ভেতরে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছিল। অথচ সেই গল্পগুলোরই সর্বাঙ্গে জড়িয়ে ছিল ভালোবাসার সুঘ্রাণ। তাই আমি... নিতান্ত না-লেখক অরসিক আমিও একটা ছোট্ট গল্প লিখে ফেলেছিলাম সেই ভূমিকায়।

গল্পটা ছিল~

"এই!"
"আরেহ! কখন এলে?"
"এই তো। সন্ধ্যাতারা ফুটল, কালীবাড়িতে কাঁসর-ঘণ্টা বাজল, আমিও পড়তে যাব বলে বেরিয়ে একদৌড়ে চলে এলাম বোসদের এই পুকুরটার পাশে।"
"কেন এলে মউ?"
"ও মা! এ আবার কী কথা? দিনে অন্তত একবার তোমায় না দেখলে আমার একদম ভাল্লাগে না।"
"আচ্ছা, তোমায় না দেখতে পেলেও কি কারও কষ্ট হয়?"
"হুঁউউউ। হয় বইকি।"
"তাই নাকি! কে সেই ভাগ্যবান? ধরে আনো তো তাকে আমার সামনে।"
"এই যে... আরেহ! এই! আমাকে ধরো! না...!"
একটা শরীর গড়িয়ে পড়ে যায় এঁদো পুকুরে। পানা আর ঝাঁঝির ফাঁসে বন্দি হয়ে সেটা তলিয়ে যায় সবুজ জলের নিরাপদ আশ্রয়ে।
আকাশ থেকে মুছে যাওয়া রঙের কষ্টে জ্বলজ্বল করে তারাদের চোখ।
শনশন হাওয়া আর ইতিউতি জোনাকির দলকে সাক্ষী রেখে পুকুরের ধার থেকে সরে আসে মৃত্যু। বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে চলে যায় অন্য কোনোখানে।

"মরণ রে, তুঁহু মম শ্যামসমান" গেয়ে ওঠা, মউ নামের মেয়েটা হারিয়ে যায় এই দুনিয়া থেকে দূরে, অনেক দূরে। তার যে সময় হয়েছিল চলে যাওয়ার।

আজ বড়ো বেশি করে এই গল্পটার কথা মনে পড়ছে।
ভালো মনের, চুপচাপ জীবনকে ভালোবাসা মউ-দের কি অকালেই চলে যেতে হয়?
অন্তত তারপর কি কেউ তাদের সঙ্গী হয় বাকি সময়টুকুর জন্য? কেউ কি তাদের বলে কল্পবিজ্ঞান বা ফ্যান্টাসি বা রহস্যের গল্প?
উত্তর পাওয়া যায় না এই প্রশ্নগুলোর। বাইরে ঘন হয় রাত।
মেলানকোলির রাত।

No comments:

Post a Comment