গত সপ্তাহ-দুয়েক ধরে ভোগান
গুজ্গুজে জ্বর (যাকে লোকে ‘সফি’ ভাষায় ভাইরাল ফিভার বলে)-টা আজ এমন চেহারা নিল যে
সকালের রুটিনটা বরবাদ করে বিছানায় ধপাস হওয়া ছাড়া উপায় রইল না| এদিকে এমন পোড়ার
চাকরি করি যে ছুটি-ফুটি পাওয়ার চান্স-ও নেই! অগত্যা সিদ্ধান্ত নিলাম যে ছোটবেলার
ওষুধটা প্রয়োগ করব, অর্থাৎ কিছু ভালো বই, কি নিদেনপক্ষে গল্প পড়ে বাকি দিনটা
কাটাবার মত শক্তি সঞ্চয় করে নেব| হাতের কাছে থাকা পুরনো আনন্দমেলার শেষ বান্ডিলটা
নামালাম (যার কিছুদিন পরেই আনন্দমেলার সঙ্গে আমার “কাট্টি” হয়ে গেছিল), যাতে
২০১৩-য় প্রকাশিত সংখ্যাগুলো ছিল| এদিক-সেদিক দেখে বেশ কিছু ভালো লেখা আবার পড়লাম,
তবে মন ভালো করে দেওয়া লেখাগুলোর মধ্যে দোয়েল বন্দোপাধ্যায়-এর (‘রঙবেরঙ’-এর ১৪২১
শারদ সংখ্যায় যাঁর লেখা “পাবলো ও পিথাগোরাস” পড়ে আমি স্রেফ ফিদা হয়ে গেছিলাম) যে
লেখাগুলো মনে ছাপ রেখে গেল, সেগুলোর কথা আলাদাভাবে লিখতেই হচ্ছে: -
১. জলপাহাড়ের খোঁজে
(৫ই জুলাই ২০১৩): আধুনিক রূপকথা লিখে, খুব বড় কথাগুলো ছোটদের খুব সহজে বলার কাজটা
ইদানিং অনেক সাহিত্যিক করার চেষ্টা করছেন| এই গল্পটাও সেই ধারায়, এবং খুব ভালোভাবে
লেখা হয়েছে|
২. গণেশ নিরুদ্দেশ
(২০শে অক্টোবর ২০১৩): এর আগের গল্প-টায় লেখিকা যে দুই ভাইবোন (ভেলকি আর ফুলকি)-এর
সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন, এই গল্পটাও তাদের নিয়েই, কিন্তু এটা নিখাদ
মজার গল্প, যেটা দীপান্বিতা রায়ের “বাহনের বায়নাক্কা”-র কথা মনে করিয়ে দেয়|
৩. ইতিহাসে পাতিহাঁস
(২০শে নভেম্বর ২০১৩): অ..সা..ধা..র..ণ একটি মজার গল্প, যা না পড়লে, হে পাঠক, আপনি
জানিবেন না আপনি কী হারাইতেছেন|
এরপর যা হয় আর কী, আমি
দোয়েল-এর আরও লেখা খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হলাম| ওই ২০১৩-র আনন্দমেলা-তেই আমি ওনার
লেখা গোটা দুই ভালো নন-ফিকশন পিস খুঁজে পেলাম, যেগুলো ছোটদের মনে আরও পড়ার, আরও
জানার আগ্রহ তৈরি করার পক্ষে একেবারে আদর্শ| সেই লেখাগুলো হল: -
১) কারাগার থেকে পালানো
(২০শে অগস্ট ২০১৩)
২) পুরাণ ও মহাকাব্যের
অমর চরিত্ররা (৫ই ডিসেম্বর ২০১৩)
অতঃপর আরও অনুসন্ধান, এবং
শেষে লেখিকার সৌজন্যে (এই বাজারে স্রেফ পড়তে চাইছি বললেই কি আর গল্প পড়তে পাওয়া
যায়, তাও আবার “ফ্রি-ফ্রি-ফ্রি”??) পাওয়া আরও তিনটি লেখা পাঠ| এর মধ্যে নন-ফিকশন
পিস একটিই: কড়ি দিয়ে চিনলাম, যা ভারতে মুদ্রার ইতিহাসের একটি
অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, অথচ কৌতূহল-উদ্দীপক বিবরণ| অন্য দুটো বাংলা ‘ফেমিনা’ পত্রিকায় প্রকাশিত
ফিকশন, যাদের নাম: -
১. মির্চ (জুন
২০১৪): সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়-এর “রসেবশে” ঘরানার উত্তরসূরী এই লেখাকে ছোটদের লেখা
বলা যাবেনা, (তবে ছোটরা তো এখন অনেক বড় হয়ে গেছে!), কিন্তু এই গল্প যে অনুভূতির
জন্ম দেয় তার কথা ভেবেই বোধহয় ‘হালকা হাসি, চোখের জল’ (আবার সঞ্জীব
চট্টোপাধ্যায়-এর কাছেই হাত পাততে হল)-গোত্রটির উদ্ভব|
২. ঘরে ফেরার গান
(জানুয়ারি ২০১৫): মধ্যবিত্ত ঊর্ধ্বগামী বাঙালির সংসারের এক কঠোর ও কটু বাস্তব
দিকের সঙ্গে লেখিকা আমাদের আরও একবার পরিচয় করিয়ে দিলেন এই গল্পে| তবে আমার এই
গল্পটা ভালো লাগেনি|
এছাড়াও দোয়েলের লেখা গল্প আছে
“জয়ঢাক”-এ, “কাকলী”-তে, এবং সাম্প্রতিকতম “রঙবেরঙ”-এ| সেগুলো এখনো পড়া হয়নি বলে
এখনো কিছু লিখতে পারলাম না| কিন্তু আমার অনুরোধ: দয়া করে লেখা চালিয়ে যান দোয়েল|
আমাদের জীবনে হাসি আর মজার বড্ড অভাব| সেই অভাব মেটানোর জন্যে আমরা কিন্তু আপনার
মত লেখকদের দিকেই তাকিয়ে আছি|