Wednesday, 21 May 2014

আবার এসেছি ফিরে!!!



কথায় আছে যে কাজ না থাকলে লোকে নাকি জ্যাঠাইমার গঙ্গাযাত্রা করে| আমার প্রচুর কাজ আছে, কিন্তু তবুও এই ব্লগ-এর মাধ্যমে সম্প্রতি মাথায় ঘোরাঘুরি করা দুটো প্রসঙ্গ উল্লেখ না করে পারছিনা|

প্রথম বিষয়: বেশ কিছুদিন আগে আমার স্ত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে একা একটা বেশ বড় ফ্ল্যাটে থেকেও আমি যে এতো ভূতের, ভ্যাম্পায়ার-এর, ওয়ারউলফ-এর, আর নানা ধরণের কিম্ভূত ও অদ্ভূত রকমের ভয়ের গল্প পড়ি, তা আমার এসবে ভয় করে কি না| আমি অকপটে উত্তর দিয়েছিলাম যে খবরের কাগজ আর নিউজ চ্যানেল/সাইট-গুলোর থেকে বড় ভয়-পাওয়ানোর উপাদান এখন আর নেই| ওগুলো আমাদের সত্যিকারের ভয় দেখায়| যখন কোনো কারণে আমার স্ত্রীর মোবাইল (মোট তিনটে নম্বর, এ ব্যাপারে উনি আমার থেকেও ‘কর্পোরেট’) বেজে-বেজে থেমে যায়, কিন্তু কেউ ধরে না, তখন ভয় করে| যখন কোনো কারণে মনে হয় যে স্কুল-বাসটা মেয়েকে যখন স্ট্যান্ডে নামিয়ে চলে যাবে তখন আমি বা আমার স্ত্রী সেখানে যদি পৌঁছতে না পারি, তখন ভীষণ-ভীষণ ভয় করে| “অবকি বার মোদি সরকার” স্লোগানে আরও অনেকের মতো আমিও গলা মিলিয়েছি, ভোট-ও দিয়েছি| কিন্তু আমার রাজ্য, আমার শহর, এখনও সেই বাহিনি-র শাসনাধীন যাদের রক্ষণাবেক্ষণে নারীদের জীবন ও সম্মানের কোনো মূল্যই আর নেই| এই ভয়ের হাত থেকে কি আমাদের মুক্তি দিতে পারবে নতুন কেন্দ্রীয় সরকার?

দ্বিতীয় বিষয়: নিখাদ এসকেপিস্ট এন্টারটেইনমেন্ট (পলায়নবাদী বিনোদন?) হিসেবে আমি যতো বই পড়েছি, তার মধ্যে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল-এর “দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড” স্রেফ তুলনাহীন| যদি এমন কেউ আদৌ থেকে থাকেন যিনি এই লেখাটি পড়েন নি, তাহলে তাঁর সুবিধার্থে জানাই যে  আমাজন অববাহিকায় পাহাড়-ঘেরা এক বিচিত্র জগত, যেখানে প্রাগৈতিহাসিক জন্তুরা এখনো স্ব-মহিমায় বিরাজমান, সেখানে এক বিজ্ঞানী (প্রফেসর চ্যালেঞ্জার)-র নেতৃত্বে একটি অভিযান ও তার সঙ্গে জড়িত নানা ঘটনা নিয়ে লেখা এই এডভেঞ্চার বিশ্ব-সাহিত্যের অমর সম্পদ| ঐ লেখকেরই (আজ যাঁর ১৫৫-তম জন্মদিন) অমর সৃষ্টি শার্লক হোমস-কে ঐ পটভূমিতে রেখে বেশ কিছু প্যাসটিশে লেখা হয়েছে, যার কিছু ভালো (লেখক উইলিয়াম মেইকল) এবং কিছু একেবারে রদ্দি| কিন্তু হোমস বা চ্যালেঞ্জারের দুনিয়া ছিলো ভিক্টোরিয়া বা এডওয়ার্ড-এর সমকালীন| আজকের পৃথিবীতে কি এমন একটা এডভেঞ্চার বানানো সম্ভব? সম্ভব, এবং একটি মারকাটারি উপন্যাস কার্যত এই বিষয় নিয়েই লেখা হয়েছে: এই ব্যাপারটি আমি বুঝলাম সেই উপন্যাসটি দ্বিতীয় বার পড়তে গিয়ে! ডগলাস প্রেস্টন ও লিংকন চাইল্ড: এই লেখক জুটিকে এখনকার ইংরেজি সাহিত্যের যেকোনো পাঠকই চিনবেন এফ.বি.আই-এর স্পেশ্যাল এজেন্ট পেন্ডারগাস্ট-এর স্রষ্টা হিসেবে| এঁদের, তথা এজেন্ট পেন্ডারগাস্ট-এর প্রথম উপন্যাস ছিলো “রেলিক”| গল্পটা প্রাথমিকভাবে ছিলো একটা মিউজিয়ামের ভেতরে ঘটতে থাকা একের-পর-এক রহস্যময় ও ভয়াবহ হত্যার তদন্ত নিয়ে| পরে দেখা গেলো যে এই মৃত্যুগুলোর জন্যে কোনো মানুষ নয়, দায়ী হলো সভ্যতার নজর এড়িয়ে যাওয়া এক প্রাণী| এই প্রাণীর বাসভূমি (আমাজনের জিনগু উপত্যকা) এবং পেন্ডারগাস্ট-এর নামের মাঝের অংশ (জিনগু, যেটা আমরা অনেক পড়ে জেনেছিলাম), দুটোই কোনান ডয়েল-এর অমর রচনার প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ, কারণ: (১) ‘দ্য লস্ট ওয়ার্ল্ড’-এ যে অঞ্চলটির কথা লেখা হয়েছিলো, সেটির সঙ্গে ঐ অঞ্চলের লিংকন-চাইল্ড-এর দেওয়া বর্ণণা-র প্রভূত সাদৃশ্য আছে; (২) প্রফেসর চ্যালেঞ্জার-এর চরিত্রটি কোনান ডয়েল যে মানুষটির ভিত্তিতে গড়েছিলেন (লেফটেনান্ট কর্নেল পার্সি ফসেট), সেই মানুষটি আমাজনের গভীর জঙ্গলের বুকে লুকিয়ে থাকা এক হারানো শহর (যাকে স্প্যানিশ কনকুইসাডর-রা ‘এল ডোরাডো’ নামে চিহ্নিত করেছিলো)-এর সন্ধানে গিয়ে ঐ অঞ্চলেই (জিনগু উপত্যকা) রহস্যময় ভাবে নিরুদ্দেশ হয়ে যান| পেন্ডারগাস্ট-এর নামে ঐ স্থান-টি ঢুকে পড়েছিলো কারণ তাঁর এক পূর্বপুরুষ ফসেট-এর সন্ধানে গিয়ে ওখানেই হারিয়ে যান এবং আর কখনো ফিরে আসেননি| আর পেন্ডারগাস্ট-এর পুরো চরিত্রটিই শার্লক হোমসের আরও ‘যুগোপযোগী’ এবং ‘কুল’ সংস্করণ মাত্র| তাই ‘রেলিক’ পড়লেই হোমস-কে আজকের পৃথিবীতে লস্ট ওয়ার্ল্ড-এর ভয়ংকর এক প্রাণী (যে শক্তিতে যেমন, বুদ্ধিতেও তেমন হওয়ায় মিউজিয়ামের ডক্টর রস তাকে ‘দ্য পারফেক্ট কিলিং মেশিন’ আখ্যা দেন)-র মোকাবিলা করতে দেখা যায়| লিংকন-চাইল্ড-এর এই শ্রদ্ধার্ঘ প্রায় পূর্ণ হয় তাঁদের সাম্প্রতিকতম পেন্ডারগাস্ট-এডভেঞ্চার-এ এসে (“হোয়াইট ফায়ার”), যেখানে কোনান ডয়েল-এর লেখা ‘শেষ’ হোমস-এর গল্প নাম দিয়ে একটি আস্ত প্যাসটিশে পেশ করা হয়েছে| এই প্যাসটিশে-টি লেখক-দের তথা পেন্ডারগাস্ট-এর মতে “দ্য হাউন্ড অফ বাস্কারভিলস”-এর মাধ্যমে ডয়েল যে সত্যিকারের বিভীষিকাময় ঘটনাটিকে ধরতে চেয়েছিলেন, তারই আরও সঠিক বর্ণণা-মাত্র| তাই, সব মিলিয়ে, যদি আপনি “ভয় করতে ভালোবাসি তোমার কোলে চেপে” মতে বিশ্বাসী হয়ে ঘরের উষ্ণতা আর নিরাপত্তার মাঝে বসে ভয়াল-ভয়ংকর এডভেঞ্চার আর খুন-খারাপির গল্প পড়তে চান, তাহলে মনে-মনে হারিয়ে যাওয়ার মতো অনেক কিছুর সন্ধান কিন্তু আমি দিয়ে দিলাম আপনাকে| দিনটা ভালো কাটুক|

No comments:

Post a Comment