অনেক দিন পর আজ ব্লগ লিখতে বসলাম| এর মধ্যে চারপাশে এত কিছু
হয়ে গেছে, যে সেই সব চিত্তচাঞ্চল্যকর ঘটনাবলির মধ্যেও শুধু সাম্প্রতিকতম-গুলোর এক
ঝলক তুলে ধরার লোভ সামলানো গেল না: -
Ø পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য
নির্বাচন কমিশনের মাস্টারমশাই-ত্ব প্রাপ্তি (ফলে সেখানকার বড়-মেজ-সেজ কর্তারা
কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনের দিন কিছুই দেখলেন না);
Ø অগ্নিকন্যা
কর্তৃক বাংলার একাধিক শহর বা তার উপকন্ঠে নির্মীয়মান টাউনশিপের নামকরণ, এবং তার
পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে প্রচুর মনিমুক্তার সমাবেশ, যা সবই আমাদের মত অসহায় বাঁদরদের
গলায় বা পেজে ঝুলবে (আসল ক্ষমতা যাঁদের হাতে তাঁরা তো সারদা-মারফৎ সর্বস্বান্ত
হয়েও চিত্রতারকাদের ভোট দিচ্ছি ভেবে চোর-ডাকাত-দেরই জিতিয়ে চলেছেন);
Ø মেটাফরিক নয়,
আক্ষরিক ভূমিকম্প!
আর নয়, এই সব ব্যাপারস্যাপার নিয়ে পড়ে থাকলে লেখাটা
এ.বি.পি.লাইভের ওয়েবসাইট-এর মত দেখাবে| তাই নিজের কথায় আসি|
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ কলকাতা থেকে ফিরে অফিসে
যোগ দেওয়ার পর পেশাগত ক্ষেত্রে আমি এমন একটা সাংঘাতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন
হয়েছিলাম, যে প্রায় মাস-খানেক সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই দূরে চলে গেছিলাম| কিন্তু একটা
সময়ের পর লোকে প্রায় সব কিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে যায়, আর আমার ক্ষেত্রে যে জিনিসটা নিজেকে
রুটিনমাফিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছিল সেটা হল আমার একাকিত্ব| এ এমন জিনিস, যে অফিসে
ফাইল, ফোন, মেইল আর অফিস-পরবর্তী বই বা সিনেমার মধ্যে নিজেকে হারিয়ে ফেলার চেষ্টা
করেও এর থেকে রেহাই পাওয়া যায় না| আর কাজ এমনই বালাই যে মার্চ মাস এসে যাওয়ার
সঙ্গে-সঙ্গে আমার বর্ণান্তর হল! শূদ্র থেকে উত্তরণ হয়ে একেবারে ক্ষত্রিয় বনে গেলাম
আমি প্ল্যান-প্রোজেক্ট আর ইয়ার-এন্ডিং-এর শেষ বাজারে| ফলে, সেই বিপর্যয় কালো মেঘের
মত আমার আকাশের একটা বড় অংশকে আচ্ছন্ন করে রাখলেও, আমি যথাসম্ভব নিজের মত করে ভালো
থাকার রুটিনে ফিরে গেছি| প্রচুর সিনেমা দেখেছি, প্রচুরতর বই পড়েছি, গান শুনেছি, আর
ফেসবুক-এর মাধ্যমে নতুন করে খুঁজে পেয়েছি এমন বেশ কিছু মানুষকে যাঁদের প্রজ্ঞা,
রসবোধ, জীবনশক্তি, প্রতিভা আর উপস্থিতি (ভার্চুয়াল হলেই বা) থেকে “চরৈবেতি”
শব্দটার মানে ঠিকঠাক বোঝা যায়| কিন্তু নিজের কথা আর নয়, বরং একটা সত্যি ঘটনা লিখে
আজকের মত পালাই|
কাল আমি যখন তেজপুরে পৌছেছিলাম, তখন বেশ রাত হয়েছে| তবু,
ডিনার সেরে, বাকি সব গুছিয়ে, শুতে যাবার আগে মনে হল, একবার স্নান না করলে ঠিক
শান্তি হচ্ছে না| যে হোটেলে উঠেছিলাম, সেখানকার বিশাল ব্যাপার| বাথরুমে ঘ্যামা
একখানা টব, আর মাথার ওপর শাওয়ার, দিশি বালতি-ফালতির কোনো সিনই নেই! নেই যখন, তখন
শাওয়ারই ভরসা| স্নান করার সঙ্গে সঙ্গে ঘুমে চোখ জড়িয়ে এল, আমি এ.সি-টা পছন্দসই
তাপমানে ফিট করে কম্বলের তলায় ডাইভ দিলাম| বেশ কিছুক্ষণ পর, সেটা কতক্ষণ তা ঠিক
করে বলতে পারব না, আমার ঘুম ভাঙলো জল পড়ার আওয়াজে| এটা ঠিক বেসিনে জল পড়ে যাওয়ার,
বা কল থেকে ফোঁটা-ফোঁটা জল পড়ার আওয়াজ ছিল না| বরং আধো ঘুমের মধ্যে আওয়াজটা শুনে
ঠিক এটাই মনে হয়েছিল যেন কেউ শাওয়ার চালিয়ে স্নান করছে, অর্থাৎ পুরোদমে জল পড়া,
তারপর থামা, তারপর আবার পুরোদমে জল পড়া| ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর বেশ কয়েকটা অনুভূতি এক
সঙ্গে মাথায় এসে হল্লা করল| প্রথমেই বুঝলাম যে ঘরটা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হয়ে গেছে| তার
সঙ্গে এটাও বুঝলাম যে আমার চোখের পাতাগুলো কেউ যেন আঠা দিয়ে সেঁটে দিয়েছে, ফলে মন
ও কান সক্রিয় হলেও ওই ইন্দ্রিয়টি অচল| আরও বুঝলাম যে হোটেলে আর কোন ফ্লোরে তখনও
হইচই চলছে, অর্থাৎ রাত খুব বেশি হয়নি| তারই মধ্যে আমি আবার শাওয়ার থেকে জল পড়ার
আওয়াজ পেলাম| এর পর আর কম্বলের তলায় পড়ে থাকা যায়না, আমিও উঠলাম| অতি কষ্টে চোখ
খুলে, বাথরুমের আলো জ্বালিয়ে, ভেতরে গিয়ে দেখলাম: জলে ভিজে আছে শাওয়ারের নিচের
ফ্লোরটা, তবে বাথরুমে সেই মুহূর্তে আমি ছাড়া কেউ নেই| এই অবস্থায় কীই বা করা যায়?
আমি মুখে-চোখে জলের ঝাপটা দিলাম, ঘরে এসে এ.সি-টা নিয়ে খুটখাট করলাম, এবং আবার
শুয়ে পড়লাম| ঘুম ভাঙল ভোর ছ’টায়, আর তারপর শুরু হয়ে গেল আজকের দিনটা|
কী বুঝলেন? আমি তেজ্পুরের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডেন্টকে বলে
রেখেছি পরের বার আমি তেজপুর এলেও যেন ওই ঘরটাই বুক করা হয়| আপনাদের জন্যেও কি
তেমনটাই বলব?
No comments:
Post a Comment