Thursday, 20 November 2014

কিশোর ভারতী: শারদীয়া ১৪২১

এবারের শারদীয়া কিশোর ভারতী পত্রিকাটা অনেকদিন ধরে, বেশ ঠাণ্ডা মাথায় পড়ে, আজ শেষ করলাম|

পত্রিকাটির যে লেখাগুলো খুব-খুব ভালো লেগেছে সেগুলোর নাম এবং মন্তব্য আগে দেওয়া যাক: -

1.      ডাঃ সায়ন পালের গ্রাফিক নভেল “বঙ্কু ডাক্তার আর দক্ষিন রায়”: কিশোর ভারতীর মাধ্যমে পরিচিত হওয়া চরিত্রগুলোর এই দুর্দান্ত এডভেঞ্চার সত্যিই উপভোগ্য|
2.      ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়-এর “দ্বীপের নাম কালাডেরা”: জগুমামার আর একটি দুর্দান্ত এডভেঞ্চার যাতে বিজ্ঞান, রহস্য, আর হিংস্রতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে|
3.      অনুরূপ চক্রবর্তীর ছবি ও গল্পে স্রেফ ফাটাফাটি কমিক্স “মৌমাছি হইতে সাবধান”|
4.      অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী-র “রহস্য যখন মাইক্রোস্কপিক”: কল্পবিজ্ঞান, সন্ত্রাসবাদ, রোমাঞ্চ, এবং প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই, এই চারটি রঙের সুতো দিয়ে যে ঠাসবুনোট নকশাটি লেখক তাঁর সহজ অথচ স্মার্ট ভাষায় গেঁথেছেন, তার বর্ণনা দিতে পারবো না, শুধু সব্বাইকে এটি পড়তে বলবো|
5.      হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্তের “কত কক্ষে কাগজ পোড়ে”: এডভেঞ্চার সাহিত্যের জন্যে যে লেখকের এমন নামযশ, তাঁর কলমে ভারতের ইতিহাসের এক রক্তক্ষয়ী এবং বিভীষিকাময় অধ্যায় এতোটাই সজীব ও বাস্তব হয়ে চোখের সামনে ফুটে উঠছিলো এই উপন্যাসটি পড়ার সময়, যে মাঝে-মাঝে সংশয় জাগছিলো, ইনিই সেই লেখক কি না| অতুলনীয় লেখা|
6.      ডাঃ শ্যামল চক্রবর্তী-র “বাঙালি ডাক্তারের ওষুধ আবিষ্কার”: এক অবহেলিত ও উপেক্ষিত বাঙালির বিজ্ঞান সাধনা ও তাঁর আবিষ্কারকে ধুলো ঝেড়ে আমাদের সবার সামনে আনার জন্যে লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই| এই লেখাটি সব্বার পড়া উচিত| তরুণ বন্দোপাধ্যায়ের “বিজ্ঞানী সন্ন্যাসী”-ও একই কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য|

এবার বলি সেগুলোর কথা যেগুলো ভালো লেগেছে, কিন্তু বারবার পড়ার মতো বলে মনে হয়নি: -
1.      শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়-এর “অষ্টাঙ্গপুরের বৃত্তান্ত”: পুরোপুরি না হলেও শীর্ষেন্দু এই গল্পের মাধ্যমে তাঁর জাদুকরি কলমের কিছুটা ঝলক আবার দেখিয়েছেন| আশা করা যায় যে ওনার কলম এবার পুরনো ফর্ম খুঁজে পাবে|
2.      চন্ডী লাহিড়ীর কমিক্স “জিরাফ কথা বললো”|
3.      ছড়া-কবিতা: এই অংশটা যদিও খুব ছোটদের কথা ভেবেই সাজানো হয় (যদিও আজকের ছোটরা ছড়া পড়ে কি না, সেই নিয়ে আমার প্রভূত সংশয় আছে), কিন্তু এর লেখাগুলোয় এমন একটা সরল আর অকৃত্রিম খুশির ভাব আছে, যেটা রক্ত আর হিংস্রতার মাঝে আমার বড্ড ভালো লেগেছে|
4.      তপন বন্দোপাধ্যায়-এর “সন্ন্যাসীস্যার ও ঘোড়াভূত”|
5.      জুরান নাথের চিত্রকাহিনি “বগলা এন্ড কোং”|
6.      সৈকত মুখোপাধ্যায়-এর “জিংকো একা জঙ্গলে”|
7.      বিনোদ ঘোষাল-এর “ভেকুর কেরামতি”|
8.      স্বপন বন্দোপাধ্যায়-এর “দীপেশ এবং তার দিদি”|
9.      নির্বেদ রায়-এর “জন্মদিনের ‘উপহার’”|
10.  সুদর্শন সেনশর্মা-র “দেড় কিলো রাবড়ি, পাঁচটি আনারস এবং...”|
11.  কমলবিকাশ বন্দোপাধ্যায়-এর “11 -এর জালে নিল আর্মস্ট্রং”|
12.  কৌশিক মজুমদার-এর “এক অবিশ্বাস্য সংকেত”|
13.  জয়ন্ত দে-র “খড়ের বাছুর”|
14.  অশোককুমার সেনগুপ্তের “চরণদাসের গৃহত্যাগ”|
15.  ঝিমলি মুখার্জি পাণ্ডে-র “রাজরহস্য”|
16.  দীপান্বিতা রায়-এর “ডুপ্লিকেট চাবি”|
কুমকুম সমাদ্দারের “ভাসা গুড়গুড়ের লাটের পথে” গল্পটি সুলিখিত, কিন্তু আজ থেকে তিরিশ বছর আগের কোনো শারদীয়া পত্রিকাতেই লেখাটি মানাতো|

পত্রিকাটির যে লেখাগুলো পড়ে তাদের লেখক/লেখিকাদের বয়কট করার বাসনা জেগেছে সেগুলো নিয়ে আমি আলাদা করে কোনো মন্তব্য করবো না| লেখাগুলোর প্রসঙ্গে একটাই কথা বলার আছে: সম্পাদক যদি লেখকদের নাম বা খুঁটির জোর ছাড়া, অন্য কোনো কারণে এই লেখাগুলোকে এই পত্রিকার অন্তর্ভুক্ত করে থাকেন, তাহলে তাঁর অবিলম্বে কিছুদিনের জন্যে বনবাসে গিয়ে মাথা সাফ করে আসা অত্যন্ত প্রয়োজন| এই লেখাগুলো হলো: -
1.      সমরেশ মজুমদারের “অর্জুন এবং কৌটোর প্রেত”|
2.      প্রফুল্ল রায়ের “রামভরোসার মোটরগাড়ি” (দ্বিতীয় ভাগ)|
3.      কাবেরী রায়চৌধুরীর “রাসেলের বাণিজ্যযাত্রা”|
4.      অনীশ দেব-এর “গোলাপি, নরম এবং ঠান্ডা”|
5.      শান্তিপ্রিয় বন্দোপাধ্যায়-এর “মৃত্যুপুরী”|
6.      কিন্নর রায়-এর “সামিটের আগে”|
7.      বিকাশ মুখার্জি-র “অভিজ্ঞতা”|

যে লেখাগুলো পড়ে ভালো বা মন্দ, কোনো রকম ভাবনাই আলাদাভাবে মনে আসেনি, সেগুলোর কথা লিখছি না| এছাড়া যে লেখাগুলো ঘোষিত ভাবেই সংশ্লিষ্ট লেখকদের [যাঁদের ‘সেলিব্রিটি’ নাম দিয়ে ভূষিত করা হয়েছে] নামের জোরে (এবং খুব সম্ভবত আজকের কর্কটরোগাক্রান্ত বাংলায় ভাঙচুরের হাত থেকে সুসজ্জিত শো-রুমটিকে বাঁচাতে) এই বই-এ স্থান পেয়েছে এবং যেগুলো না পড়লে কিছুমাত্র ক্ষতি হবে না, সেগুলোর কথাও উল্লেখ করার দরকার নেই|


তাহলে শেষ বিচারে আমার মূল্যায়ণ কী? অচল মুদ্রার তুলনায় যে পত্রিকায় সচল টাকা বেশি, যার মাঝে কয়েকটি বার-বার পড়ার মতো মণিমুক্তো-ও, সেই পত্রিকাকে মন খুলেই ভালো বলা উচিত| আমিও বলছি: শারদীয়া কিশোর ভারতী আমার ভালো লেগেছে, তবে ২০১৬-র পরেও যদি ‘সেলিব্রিটি’-ঘেঁষা ‘সাহিত্য’ (??) এই পত্রিকায় দেখি তবে আর পত্রিকা না কিনে বইমেলায় বই-আকারে আলাদা ভাবেই ভালো লেখাগুলো কিনতে হবে|

No comments:

Post a Comment