ছেলে/পুরুষ-এর যদি দাড়ি-গোঁফ না থাকে, তবে তার অবস্থা যে কি
করুণ হয়, তা সকলেই জানেন| কোথাও একটা পড়েছিলাম যে ভীমসেন [জোশি নন, মধ্যম পাণ্ডব-এর
কথা বলছি (অবশ্য তিনিও যথেষ্ট ‘জোশি’ ছিলেন বলেই জানা যায়)] মাকুন্দ ছিলেন|
তারপরেও যে তিনি শুধু দুর্যোধন-দুঃশাসন-কীচক প্রমুখের ওপরেই নিজের বাহুবল
দেখিয়েছিলেন, কোনো মাস-মার্ডারার হয়ে যাননি, এ থেকেই তাঁর সংযমের প্রভূত পরিচয়
পাওয়া যায় [এও বোঝা যায় যে মহাপ্রস্থানের পথে তাঁর পতন তাঁর অতিভোজনের জন্যে নয়,
অন্য কোনো কারণে হয়েছিলো| সি.বি.আই না এস.আই.টি? হমমমম...]| কিন্তু একবার গজালে,
এবং গজাতে থাকলে, দুটি বস্তুই ‘কাফি তকলিফ’-দেয়| গোঁফ-কে অনেক যত্নে রাখতে হয়,
যাতে তার একদিকের দৈর্ঘ্য/প্রস্থ অন্যদিকের থেকে আলাদা না হয়, যাতে তাতে ক্রমে
দৃশ্যমান হওয়া সাদা/ধূসর কেশ (অন্য কী টার্ম ব্যবহার করা যায় তা বুঝে পেলাম না|
মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী যা খুশি বলতে পারেন, কিন্তু আমরা...) খুব বাজে একটা এফেক্ট
না আনে, ইত্যাদি-ইত্যাদি| আর দাড়ি মানে এক বিদিকিচ্ছিরি ব্যাপার| রোজ সকালে
ফেনা-জল-সময়ের শ্রাদ্ধ করে ওটিকে নির্মূল না করলে গাল কুটকুট করবেই; একমাত্র রেহাই
মিলতে পারে যদি ওটিকে নির্বিবাদে বাড়তে দেওয়ার অভ্যাসটি বজায় রাখা যায়| অনেক
মুসলিমকে দেখেছি এই সমস্যাটার মোকাবিলা করার জন্যে গোঁফ উড়িয়ে শুধু দাড়ি লম্বা
করতে (এর পেছনে কি কোনো ধর্মীয় কারণ আছে? হতেও পারে| একাধিক মানুষের মুখে শুনেছি
যে ইসলাম নাকি সবথেকে বিজ্ঞানসম্মত ধর্ম| তাতে হয়তো পুরুষের এই দ্বিবিধ সমস্যার এই
বিশেষ সমাধান করে দেওয়া আছে|), কিন্তু আমার যেহেতু ওই লুক-টা অসহ্য লাগে, তাই ওই
বিশেষ সমাধানটাও আমার কোনোকালেই মনঃপূত হয়নি| এদিকে শীতের সকালে রোজ এই হাঙ্গামা
আর পোষাচ্ছিলো না| তাই কাল রাতে শুতে যাওয়ার আগে এর সমাধান ভাবার চেষ্টা করছিলাম|
আমার এয়ারফোর্স প্রত্যাগত বাবা এই সমস্যার সমাধান করেছিলেন
দাড়ি ও গোঁফ দুইই কামিয়ে| সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, উত্তম কুমার, সৌরভ গাঙ্গুলি: এঁরা
প্রত্যেকেই সেই পথেই হেঁটেছেন| কিন্তু এঁদের মুখের এমন একটা ব্যাক্তিত্ব আছে যে
গোঁফ ছাড়াও এঁদের ভালো লাগে| আমি গোঁফ কামালে নিজেই নিজের মুখের দিকে তাকাতে পারবো
না, বাকিরা যে কী পরিমাণ হাসাহাসি করবে তা তো সহজেই অনুমেয়| অতঃপর একটিই উপায়:
গোঁফ ও দাড়ি দুটিকেই অবাধে বাড়তে দেওয়া| এই সমাধানটা আমার বেশ পছন্দ হলো| একদিকে
রবীন্দ্রনাথের শান্ত-সৌম্য মুখ, অন্যদিকে আমার একগাল দাড়ি দেখে শ্রীমতীর মেজাজ
কেমন হবে, এই নিয়ে ভেবে বেশ মুচকি-মুচকি হেসে ঘুমের সাধনা করলাম| কিন্তু
তারপর....?
কোনো একটা বই-এ পড়েছিলাম (এইসব নাম মনে রাখতে পারলে
ফুটনোট-টীকা সহযোগে এগুলোকে প্রবন্ধ বানানো যেতো, কিন্তু আমার আলসেমি নিয়ে আর কীই
বা বলার আছে?) যে স্বপ্নে নাকি অবচেতন মন আমাদের এমন অনেক সত্যের সন্ধান দেয়, যা
আমরা সচেতন ভাবে ভাবতে পারিনা| ঠিক তাইই হলো কাল রাতের স্বপ্নে| আমার
ক্রম-পশ্চাদগামী কেশরেখা (গোদা বাংলায়: রিসিডিং হেয়ারলাইন)-র কথাটা আমি খেয়াল
রাখিনি বা রাখতে চাইনি| স্বপ্নে দেখলাম যে আমাকে দেখতে রবীন্দ্রনাথ নয়,
শুভাপ্রসন্নের মতো দেখাচ্ছে!
ঘুম ভাঙার পর যে টুথব্রাশ-এর বদলে শেভিং রেজর হাতে উঠেছিলো,
একে কি অস্বাভাবিক বলা যায়?
আহা ! বড়ই চিত্তবিনোদক ও সেইসঙ্গে আঁতকানিউদ্রেককারী একটা রচনা। আপনার প্রত্যেকটার মতো এটাও খুব উপভোগ করলাম।
ReplyDelete.
এই সঙ্গে আর একটি কথা যোগ করতে চাই যেটা আমার মনে দাগ কেটে গেছে। দাড়িওয়ালাদের কীসে যে ঘুমের বারোটা বাজতে পারে তা বোধহয় অ্যার্জে বুঝেছিলেন। তাই তো এক গল্পে রাতের বেলায় দুশমনরা ক্যাপটেন হ্যাডককে তাঁর দাড়িটা চাদরের নীচে কি উপরে রাখবেন সেটা ভাবতে ভাবতে কেবিনে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে বলেছিল।