Thursday, 24 November 2016

গল্পের সৌরভ

ল্যামার্কের সূত্র মেনে অব্যবহারে ক্ষয়প্রাপ্ত অঙ্গের মতো আমার এই ব্লগ নিয়ে আজ আরেকবার বসা গেল। এবারের লেখাটা আমার এক বন্ধু-কাম-ভাইয়ের লেখালেখি নিয়ে।
আপনারা সৌরভ নামে ক’জনকে চেনেন?
বাঙালিদের মধ্যে এই নামটাকে মোটামুটি কমন বলা যায়, তাই এই নামে আপনারা যে একাধিক ব্যক্তিকে চিনবেন, সেটাই স্বাভাবিক।
আমি কাদের চিনি?

(১) সৌরভ গাঙ্গুলি: ভারতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম অধিনায়ক, এবং বিশ্বক্রিকেটে বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই খেলোয়াড়টির আলাদা করে পরিচয় দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি কেউ দাবি করেন যে তিনি এঁকে চেনেন না, তাহলে, মা কসম! চুন-চুনকে মারুংগা!
(২) সৌরভ গাঙ্গুলি: আমার শালা। বিশ্বাস করুন, ইয়ার্কি মারছি না, গালাগালও দিচ্ছি না। আমার বউয়ের মাসতুতো ভাইয়ের নাম এটাই।
(৩) সৌরভ মুখোপাধ্যায়: এই সময়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক, যাঁর কাছ থেকে আমরা পেয়েছি ‘ধুলোখেলা’, ‘সংক্রান্তি’-র মতো অসাধারণ উপন্যাস, এবং অবিস্মরণীয় কিছু ছোটোগল্প।
(৪) সৌরভ দত্ত: মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য-র বিভিন্ন রচনা এবং অলঙ্করণ নিয়ে “মনোরঞ্জন মিউজিয়াম”, প্রেমেন্দ্র মিত্র-র রচিত অদ্বিতীয় চরিত্র ঘনাদা-র বিভিন্ন কাহিনি প্রকাশের সঙ্গে জড়িত তথ্য এবং অমূল্য সব অলঙ্করণ নিয়ে “ঘনাদা গ্যালারি”, এবং সামগ্রিক ভাবে কৌতূহলোদ্দীপক এবং দুর্লভতম তথ্য ও অলঙ্করণের সমাহার “ব্লোগাস”-এর প্রাণপুরুষ হলেন এই মানুষটি।
বাংলা সাহিত্যের হারিয়ে যাওয়া ও ভুলে যাওয়া নানা দিকের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া এই নীরব ও অনলস মানুষটির সঙ্গে পরিচয় হওয়াটা আমি আমার সোশ্যাল মিডিয়া জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি বলেই মনে করি।
(৫) সৌরভ চক্রবর্তী: আজকের পোস্ট এই অনুজপ্রতিম তরুণের লেখালেখি নিয়েই।
আগরতলা থেকে প্রকাশিত ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ নামক বিশিষ্ট পত্রিকার সম্পাদক এই মানুষটি নিজেও যে একজন দক্ষ সাহিত্যিক তা জানতে আমার বেশ সময় লেগেছিল। মানুষটি লেখেন খুবই কম, তাও প্রচারের ঢক্কা-নিনাদ থেকে দূরে থাকা পত্রপত্রিকায়। তাই তাঁর লেখাগুলো পাঠকের রাডারের নিচেই থেকে যায়।
বড়োদের লেখায় যথেষ্ট দড় সৌরভ রহস্য, রোমাঞ্চ, অলৌকিক সাহিত্যে পদচারণা করছেন আজ বেশ কয়েক বছর ধরে, যার নিদর্শন ছড়িয়ে আছে মূলত ‘ব্ল্যাকবোর্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন লেখায়, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলঃ “হোরেশিও, এমনি এক গল্প”, “ইক্লিপ্স”, “চতুর্থ স্তম্ভ”, এবং “কংক্রিট”।
শিশু-কিশোর সাহিত্যের অঙ্গনে সৌরভ পা রেখেছেন কম দিনই। আজকের এই পোস্টে আমি শিশু-কিশোর সাহিত্যে তাঁর যাত্রাপথের একটা ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
পথ-চলতে শুরু করা যেকোনো শিশুর মতো এই লেখাগুলোয় লেখকের কলম বা আঙুল প্রথমে থেকেছে আড়ষ্ট এবং টলায়মান। কিন্তু একটু-একটু করে লেখক তাঁর নিজস্ব ভাষা খুঁজে পেয়েছেন, এবং উপহার দিয়েছেন একবার ধরলে শেষ না করে থামা যায়না, এমন বেশ কিছু গল্প।

১]   বিট্টুর চিঠিঃ বিট্টু নামে এক কৈশোরের দরজায় কড়া নাড়া শিশুর এই গল্পটা তার এক বন্ধুর সঙ্গে হওয়া বন্ধুত্ব নিয়ে খুব সরল ভাবে এগিয়েছে। কিন্তু গল্পটা ব্যতিক্রমী হয়েছে আপাতভাবে অলৌকিক উপাদান এতে মিশে গিয়ে তাকে কিছুটা ওপন-এন্ডেড করে দেওয়ার জন্যে।

২] মুখার্জিবাবুর গ্যাজেটঃ “কিচিরমিচির” পত্রিকার বৈশাখ ১৪২২ সংখ্যায় প্রকাশিত এই গল্পটা দিয়ে লেখক আরো একবার প্রমাণ করে দেন যে আপাত সহজ ছকের মধ্যেও তিনি শিশু-কিশোর সাহিত্যে এমন কিছু উপাদান নিয়ে আসতে চাইছেন, যা সচরাচর দেখা যায় না।
গল্পের বিষয়বস্তু এরকমঃ বিজ্ঞান শিক্ষক প্রতুলবাবু বেশ কিছুদিন ধরে অনিদ্রায় ভুগছেন। ঘুমের ওষুধ খেয়েও ঘুমোতে না পারা প্রতুল তাঁর ভাইপো বিট্টুকে নিয়ে এলেন এক দূরের বাংলোবাড়িতে। সেখানে মুখার্জিবাবু নামে জনৈক বিজ্ঞানীর আবিষ্কৃত একটি ঘড়ির মতো চেহারার যন্ত্র পাওয়া গেল ঝোপের মধ্যে, যা হাতে পড়লেই গভীর ঘুমে তলিয়ে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এই গ্যাজেট কি পারবে প্রতুলবাবুর হারিয়ে যাওয়া ঘুম ফিরিয়ে দিতে?
বিজ্ঞান, সিউডো-সাইন্স, এবং মনস্তত্ত্ব দিয়ে সহজ ভঙ্গিতে একটা টানটান গল্প সাজিয়েছেন লেখক এখানে।

৩] বিট্টুর বাবুই কাণ্ডঃ “কিচিরমিচির” পত্রিকার ২০১৫ উৎসব সংখ্যায় প্রকাশিত এই গল্পটা কিন্তু একেবারেই সহজ-সরল, এবং যেসব পাখিদের দিকে আমরা এমনিতে তাকাইও না, তাদের প্রতি ছোটোদের মধ্যে কৌতূহল এবং ভালোবাসা জাগানোর উদ্দেশ্য নিয়েই লেখা।

৪]  মার্জার বিভীষিকাঃ “কাকলি” পত্রিকার ১৪২২ পুজো সংখ্যায় প্রকাশিত এই গল্পটা পড়া শুরু করে একেবারে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতে হয়। এই গল্পের কাঠামোটিও আদ্যন্ত মনস্তাত্ত্বিক, এবং প্রাপ্তমনস্ক পাঠকের জন্যেই।
এক দুর্ঘটনার পর উদীয়মান লেখক রথিনের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল বেড়ালের ভয়ে। পরিবেশের বদল হলে অবস্থা বদলাবে, এই আশায় শহর থেকে দূরে এক বাংলোয় এল রথিন। কিন্তু সেখানেও তার পিছু নিল বেড়ালের থাবার ছাপ! তারপর কী হল?
লেখনীর যৎকিঞ্চিত শিথিলতা নিয়েও এই গল্পটি রোমাঞ্চলোভী পাঠকের মন জয় করবেই।

৫] শেষ গল্পঃ “কিচিরমিচির” পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি সংখ্যায় (এপ্রিল ২০১৬) প্রকাশিত হয় এই গল্পটি।
কন্সট্রাকশনের কাজ নিয়ে দিল্লির উপকন্ঠে যাওয়া এক ইঞ্জিনিয়ার তার প্রতিবেশীর রোজকার আচরণে এমন একটা অস্বাভাবিক জিনিস দেখল যে সে তার সঙ্গে আলাপ করল ব্যাপারটা ভালো ভাবে জানার জন্যে। সেই প্রতিবেশীর কাছে সে এমন একটা বই পেল যার গল্পগুলো অসম্পূর্ণ, অথচ বইটির পাঠক স্বপ্নে গল্পটার শেষ দেখতে পায়, আর প্রতিটি গল্পই শেষ হয় মৃত্যু দিয়ে। তারপর কী হল?
টানটান গতি, নির্মেদ সংলাপ, মজবুত কাঠামো, আর রুদ্ধশ্বাস সাসপেন্সঃ এই দিয়ে গড়ে ওঠা এই গল্পটি বাংলায় শিশু-কিশোর সাহিত্যের এক বিরল সম্পদ।

৬] ত্রিমাত্রিক ভয়ঃ “সন্দেশ” পত্রিকার জুলাই ২০১৬ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় এই গল্পটি।
আগরতলা ছেড়ে দীর্ঘদিন কলকাতাবাসী মনোহর সিদ্ধান্ত নিলেন, তাঁর পৈতৃক বাড়ি, এতদিন যার রক্ষণাবেক্ষণ তথা ভোগদখল করে এসেছেন ছোটোবেলার বন্ধু ভোলা, এবার তিনি বেচে দেবেন তাঁর ভগ্নিপতিকে। সব ঠিকঠাক, কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়াল বাড়ির লাগোয়া আট থামওয়ালা চালাটি।
কেন? কীভাবে? আর রহস্যের সমাধান হল কেমন করে?
রহস্য-রোমাঞ্চ, আর তার পাশাপাশি বিজ্ঞান ও যুক্তিকে পছন্দ করা ছোটোরা যে এই গল্প খুব-খুব ভালোবাসবে, এ নিয়ে আমি নিশ্চিত।

৭]   সুনন্দ আর সবুজ বজ্রঃ “কিচিরমিচির” পত্রিকার ২০১৬ উৎসব সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে এই গল্পটি।
গ্রামের ফাঁকিবাজ ছেলে সুনন্দ এক রাতে জানলা দিয়ে বাইরের ঝড়বৃষ্টি দেখছিল। হঠাৎ সে দেখল, একটা সবুজ আলো পড়ল কিছুটা দূরের ঝোপঝাড়ে। সক্কাল হতেই সেখানে গিয়ে সে খুঁজে পেল সবুজ আলোর দ্যূতি ছড়ানো বাজ-এর মতোই চেহারার একটা জিনিস। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সে বুঝতে পারল, আশ্চর্য ক্ষমতা আছে সেই সবুজ বজ্রের।
তারপর কী হল?
কল্পবিজ্ঞান, ফ্যান্টাসি, ইচ্ছাপূরণ, আর বড়ো হওয়ার এই সহজ-সুন্দর গল্পটা পড়তে পেয়ে মন ভরে যায়।

আমার এই সংক্ষিপ্ত পোস্ট পড়ে সৌরভের লেখার বিষয়গত বৈচিত্র্য, এবং কাহিনির নির্মাণকুশলতা বোঝা মুশকিল। আরো কঠিন প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের জন্য লেখায় তাঁর দক্ষতার আন্দাজ পাওয়া, যেহেতু তাদের নিয়ে এযাত্রা কিছু লেখা গেল না। হয়তো পরের বার...
আপনারা যদি ওঁর লেখা পড়তে চান, তবে কিচিরমিচির পত্রিকাটি জোগাড় করার চেষ্টা করুন। অনেকগুলো ভালো লেখা সেখানেই পেয়ে যাবেন।

আশা রাখি যে পাঠকের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং সম্পাদকদের উৎসাহে সৌরভ তাঁর লেখা দিয়ে আমাদের আমোদিত করে চলবেন আরো অনেক-অনেক দিন।

Sunday, 21 August 2016

স্বীকারোক্তি, অথবা ভ্যাপসা গরমে রোববারের দুপুর

শান্তনু, আমি তোকে বলা কথাটা ভুলে গেছিলাম রে। সরি। আবার ঠেকে শিখলাম আর কী। আমি আর এই ভুলটা করছি না
আজ থেকে প্রায় ষোলো বছর আগের কথা।
তখন আমার যা রুটিন ছিল, সেটা মেনেই সকাল এগারোটার কল্যাণী সুপার ধরে কলকাতা গিয়ে, আর আই.আই.এস.ডব্লু.এম-এ পড়াশোনা সেরে বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদের গ্যালপিং শান্তিপুর-টা ধরে ব্যারাকপুর ফিরছি।
দরজার কাছে, কনুই আর মাথার জংগলের মধ্য দিয়ে হাতদুটোকে ওপরে তুলে, পা-মাড়ানো এড়িয়ে একটু-একটু করে পজিশন নিচ্ছি। এমন সময় শান্তনুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
শান্তনু সেই বিরল লোকেদের একজন, যে আমার সঙ্গে বিবেকানন্দ মিশন, রহড়া মিশন, ভি.সি. কলেজ, কালীবাড়ির মাঠের হাস্যকর ক্রিকেটঃ এই সব কিছুতে থেকেও কখনও আমার বন্ধু হয়নি। বা আমি ওর বন্ধু হইনি। একই ব্যাপার।
সেদিন কিন্তু, ট্রেনের সেই মারাত্মক ভিড়ে পাস্কালের সূত্র মেনে আমার ওপর পড়া চাপ সুষমভাবে নিজের চারপাশে ছড়িয়ে দিতে-দিতেও ওর সঙ্গে আমার হওয়া অতি-সংক্ষিপ্ত কথোপকথনটা খুব দামি ছিল। ওর কাছে হয়তো নয়, কারণ ও কথাটা খুব সহজভাবেই জিজ্ঞেস করেছিল।
বন্ধুত্বের অধিকার না থাকলেও একটা বয়স অবধি বোধহয় সবাই সবাইকে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে পারে। ও সেই ভাবেই প্রশ্নটা করেছিল।
ঋজু, আমাদের ব্যাচের সবাই তো কাজে ঢুকে গেল। অমুক-অমুক তো বিয়ে করে বাচ্চার অন্নপ্রাশন খাইয়েও দিল। এক তুই এখনও বেকার রয়ে গেলি। কেন রে? তুই কি কোনও কাজই পাচ্ছিস না?

শহরতলি শেষ হয়ে তখন যে ভিড়টা দরজার সামনে দলা পাকাচ্ছে, তাতে জমাট বাঁধা লোকেরা প্রায় সবাই আমারই মতো ব্যারাকপুরের বাসিন্দা, নয়তো শেওড়াফুলি বা শ্রীরামপুরের লোক, যারা স্টেশন থেকে ফেরিঘাটের অটো নেবে। তাদের মধ্যে কেউ-কেউ আমাকে চেনে, আবার অনেকেই চেনে না, কিন্তু শান্তনুর গলার স্বরে কোথাও হয়তো তারাও বুঝতে পেরেছিল, ওই এক তুই-এর পেছনে রয়েছে কিছু একটা বিশেষ ব্যাপার।
মাধ্যমিকে সাব-ডিভিশন টপার, উচ্চ-মাধ্যমিকে প্রথম কুড়ির মধ্যে থাকাঃ একে কি বিশেষত্ব বলা যায়?
যায় হয়তো। জানিনা, তবে ভিড়ের একটা বড়ো অংশ হঠাৎই আমার দিকে তাকিয়েছিল তখন।
১৯৯৭-এর সেপ্টেম্বরে বি.এইচ.ইউ, এবং বায়োটেকনলজির কোর্স ছেড়ে চলে এসেছিলাম আমি। খেয়াল চেপেছিল সিভিল সার্ভেন্ট হওয়ার। ডব্লিউ.বি.সি.এস নয়, আই.এ.এস!
তবে মান্থলি-তে অকুপেশনের জায়গায় একটা ড্যাশ বসানোর সময়, লিফটে চেপে নামতে গিয়ে দড়ি ছেঁড়ার অনুভূতিটাও হয়েছিল তখনই।
সেই ভাবেই তদ্দিনে তিন বছর কেটে গেছে।
শান্তনুর প্রশ্নটাকে তাই, কোনও মতেই অন্যায্য বলা যায় না।
কিন্তু আশে-পাশে দাঁড়ানো লোকগুলোর চাউনিতে কি শুধুই কৌতূহল ছিল?
আমার কেন যেন মনে হয়েছিল, সেই চাউনিগুলোতে আমি দেখতে পাচ্ছি, আর মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকে এদিক-ওদিক ছিটকে যাওয়ার আগে এক চিলতে হিংস্র মনোরঞ্জন-লাভের বাসনা।

আমি কি রেগে গেছিলাম? বা ভয় পেয়েছিলাম? ও দুটো তো বেশির ভাগ সময়েই একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। ফাইট, অর ফ্লাইট।
আমি নিজেই আশ্চর্য হয়ে শুনেছিলাম আমার কথাগুলো।
আসলে কী জানিস? এখন আমার ঘুঁটিটা পেকে এসেছে। এখন এই খেলা ছেড়ে অন্য দিকে মন দিলে, তারপর সারা জীবন আপশোস করতে হবে।
আপশোস করার মতো জিনিসের লিস্টটা এখনই অনেক লম্বা হয়ে গেছে রে। সেটা আর বাড়াতে চাই না
শান্তনু আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি।
আর কতদিন এই পাকা ঘুঁটি ঘরে তোলা-র পেছনে আমি ব্যয় করব, এটা ও জানতে চায়নি।
তবে আমি নিজের কাছে জবাব চেয়েছিলাম, এবং নিজেকে একটা ডেডলাইন দিয়েছিলাম, যার মধ্যে সিভিল সার্ভিস হলে হবে, না হলে গলায় টাই ঝুলিয়ে জিনিস বেচতে বেরিয়ে পড়ব।

তারপর আর কোনও দিন শান্তনুর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি।
এক বছরের মধ্যেই আমি ডব্লিউ.বি.সি.এস এবং আই.এ.এসঃ দুটো নদীই পার করি, আর ব্যারাকপুর ছাড়ি।
তারপর অন্য জায়গা, অন্য গল্প, অন্য জীবন।

কিন্তু আজ হঠাৎ এসব কথা কেন?
কারণ আজ আমি আবিষ্কার করেছি, যে আমি আপশোস করার মতো বিষয়ের তালিকা স্বেচ্ছায় দীর্ঘায়িত করাটা আবার শুরু করেছি।
আমি রিভিউয়ার হিসেবে নাম, বা মগনলাল মেঘরাজ-এর মতো বদনাম, কুড়িয়েছি বেশ কিছুদিন হল। ইদানিং দেখছি, সেই সুবাদে আমার কাছে বাংলা আর ইংরেজিতে বেশ কিছু বইপত্র এসেছে রিভিউ করার জন্যে।
ইংরেজি বইপত্র নিয়ে সমস্যা নেই। সেগুলো আমি পড়ি খুব দ্রুত, এবং তালি বা গালি চটপট ওয়েবের জানলা দিয়ে ছুঁড়ে দিয়েই আমি আবার নিজের পছন্দসই বই নিয়ে কাত হই।
সমস্যা হয় বাংলা বই নিয়ে।

আমার স্ত্রী এবং মেয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণ, তাই তাঁরা আমাকে সংসারের একমাত্র নাবালক সদস্য হিসেবে ট্রিট করেন। কিন্তু তার বাইরে যারা ফেসবুক বা অন্যত্র আমার প্রোপি হিসেবে বিরাজমান প্রফুল্ল আনন দেখে বিভ্রান্ত হন, তাঁরা আমাকে প্রায়ই বিভিন্ন লেখা পড়তে বলেন যেগুলো বড়োদের লেখা বলে পরিগণিত হয়, অথচ যেগুলো থ্রিলার, ভূতের গল্প, গোয়েন্দা গল্প, কল্পবিজ্ঞান, রহস্যঃ এসব জঁর ফিকশনের বাইরে।
আমার পক্ষে এই কাজটা দুঃসাধ্য বললেও কম বলা হয়।
তবু, নানা বাহানা দিয়ে, এমনকি ট্যাহা নাই বলে আমি ওই ধরণের লেখাপত্তর পড়ার অপচেষ্টা থেকে নিজেকে বিরত রাখি।
কিন্তু বিনামূল্যে পাওয়া বই নিয়ে কী হবে উপায়?
ওগুলো রিভিউ না করলে প্রতি মুহূর্তে আশংকা হয়, এই বুঝি সাহিত্যিক ফেসবুক বা অন্য কোনও মাধ্যমে আমার নাগাল পাবেন, এবং ক্যাঁক করে আমায় চেপে ধরে জানতে চাইবেন, এতদিন (আমার বইয়ের রিভিউ নিয়ে) কোথায় ছিলেন?
বিশ্বাস করুন, ভাবনাটা এতই উদ্বেগজনক, যে হাতে থাকা গরম চপ-তুল্য থ্রিলারকেও বাসি মুড়ি বলে মনে হয়।
তাই, পরদিন ঘুম থেকে ওঠার পর দিনের শুভ সূচনা-র আশায় ইসবগুল খাওয়ার মতো করে, আজ তেমন দুটো রিভিউ-অপেক্ষিত বই নিয়ে শুলাম।

ওরে বাবা!
আমার প্রথমেই মনে হল, এদের দেয় কে, মানে ছাপে কে?
এই দুঃখবাদী প্যানপ্যান, যার পাতার-পর-পাতা জুড়ে আছে মেয়েদের/মহিলাদের/বৃদ্ধাদের আত্মত্যাগ, ছেলেদের/পুরুষের/বুড়োদের লোভী+দুর্বল+হিংস্র+শোষক+প্রবঞ্চক চেহারা, যার ন্যারেটিভ হল কবিতা-লাইট আর কেন্দ্রীয় চরিত্র হল সানলাইট, মানে শুভ্রতার ঝলক..... এসব কারা পড়েন?
যাঁরা পড়েন, তাঁদের মেহফিলে ভুলক্রমে গিয়ে পড়লে আমি যে বর্তমানের আদনান সামি চেহারা থেকে একেবারে সামি কাবাব হয়ে যাব, এটা গ্যারান্টিড। তাই আগেই সেইসব শ্রদ্ধেয় পাঠক-পাঠিকাদের কাছে বিনম্র নিবেদন পেশ করছি, আমাকে বিষবৎ পরিত্যাগ করুন, যাতে আমি আমার ভূত-রহস্যরোমাঞ্চ-সাইফাই-গোয়েন্দা এসব বই পড়ে আর তাই নিয়ে গালি-তালি দিয়েই এবারের মতো প্রাণে বেঁচে থাকি।
তাই শান্তনু, আমি আজ থেকে শুধু সেই বই-ই পড়ব, যা পড়তে আমার ইচ্ছে করে। কে কী চাইল, বা কে কী দিল, সেই নিয়ে আমি আর মাথা ঘামাব না। বাজারে চিন্তাশীল ও মনস্বী পাঠক আছেন ভূরি-ভূরি। তাদের থেকে অনেক দূরে, কোনও একটা রঙচঙে মলাটের বই নিয়ে আমি এবার কাত হচ্ছি।

আশা করি তুই ভালো আছিস

Sunday, 21 February 2016

রুদ্ধশ্বাস সপ্তক: পাঠ প্রতিক্রিয়া

ধরুন, আপনি একজন লেখকের লেখা পড়তে বেশ পছন্দ করেন| মুশকিল হচ্ছে, তাঁর লেখার প্রতি এই ভালোলাগাটা তৈরি হয়েছে কয়েকটা বিশেষ ধরনের গল্প পড়ে, যারা মূলত একটা জঁর-এর অন্তর্ভুক্ত| এবার, যখনই সেই লেখকের কোন নতুন গল্প প্রকাশ পায়, আপনি সেই কয়েকটা বিশেষ গল্প পড়ে হওয়া অনুভূতির মাপকাঠিতে নতুন গল্পটিকেও মাপতে যান| তার ফল কী হয়? যখন লেখক সেই জঁর-এর কিছু লেখেন তখন তালি, আর নইলে গালি! কিন্তু এটা কি সেই লেখকের প্রতি নিদারুণ অবিচার নয়, বিশেষত তিনি যখন গল্পের আকাশে ডানা মেলে সন্ধান করছেন সম্পূর্ণ নতুন ভূখণ্ডের? প্রসেনজিৎ বন্দোপাধ্যায় এমনই এক লেখক, যাঁর লেখার প্রতি এই অবিচার বোধহয় শুধু আমি নয়, অনেকেই করেছেন, কারণ ওনার কয়েকটা জঁর-বন্দি লেখা পড়ে আমার মতো আরও বহু পাঠক ফিদা হয়েছেন ও হয়েই আছেন! তাই লেখক আমাদের মতো বদরাগী পাঠকের কাছে এই নিয়ে কিছু বলতে এলেই আমরা যা বলি তার সরলার্থ: এর জন্যে ওনারই গাওয়া উচিত, দোষ কারও নয় গো মা, আমি স্বখাত সলিলে...|

ধান ভানতে এতখানি শিবের গীত গাইলাম কারণ গতকাল রাত থেকে পড়া শুরু করে, নানা স্থানে (যার মধ্যে হোটেলের অস্বস্তিকর বিছানা, দুপাশে বৃষ্টিভেজা চা-বাগান নিয়ে পড়ে থাকা পিচরাস্তায় দাঁড়ানো সুমো, এয়ারপোর্টের লাউঞ্জ, প্লেনে কোনঠাসা শব্দের বাস্তবায়িত রূপ: সিট, এ সবই আছে) ও কালে যে বইটি আমি শেষ করেছি সেটি প্রসেনজিৎ বন্দোপাধ্যায়-এর সাম্প্রতিক গল্প-সংকলন রুদ্ধশ্বাস সপ্তক| বইটি মাত্র ১৫৭ পাতার পেপারব্যাক| চমৎকার ছাপা, টাইপোর কলংকবর্জিত, এবং সুমন্ত গুহর পরিমিত অলংকরণে সমৃদ্ধ সাতটি গল্পের সংকলন এই বইটি যে আমার খুব-খুউব ভালো লেগেছে শুধু তাই লিখে ভালোলাগাটা ঠিক বোঝানো যাবে না|

আগে লিখি, সাতটা গল্প ছাড়া এই বইয়ে আর কী আছে| আছে এই সময়ের সেরা সাহিত্যিকদের অন্যতম, শ্রী সৌরভ মুখোপাধ্যায়-এর একটি ভূমিকা, যেটি নিয়ে আমি শুধু এটুকুই লিখব যে এমন অসাধারণ বইয়ের জন্যে ঠিক এমন একটি ভূমিকারই দরকার ছিল, যেটি পড়ার পর পাঠক বুঝবেন যে তিনি কী অমূল্য রতনের দ্যূতিতে আলোকিত হতে চলেছেন| যদি আমার কখনও বই ছাপা হয় (ওরকম ভাবে হাসবেন না; টবে ফুলকপি চাষ নিয়ে বই বেরোতে পারে, আর আমার বেলাতেই আপনাদের..) তাহলে সৌরভকে ধরে একখান ভূমিকা আদায় করতেই হবে|

এবার আসি গল্পদের কথায়|

(১) অতঃ সার শূন্য: এই গল্পটি এক বিখ্যাত সাহিত্যপত্রে প্রকাশের পর নানাবিধ কাঁটাছেড়ার মধ্য দিয়ে গেছিল, তাই অধিকাংশ পাঠক গল্পটিকে হয়তো চট করে চিনে ফেলবেন| সেই সময় গল্পটি আমার পড়তে ভালো লাগেনি| ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল, কাল রাতে আবার গল্পটা পড়তে গিয়ে বুঝলাম যে লেখক গল্পটায় খুব সূক্ষ্ম কয়েকটা, আর একটা বিশাল পরিবর্তন এনেছেন| এতে লেখাটা বেশি যুক্তিযুক্ত তো হয়েইছে, সঙ্গে লেখার রাফ এন্ড টাফ ভঙ্গিটা খুব মানানসই হয়ে উঠেছে| এর বেশি লিখছি না, শুধু এটুকুই বলার যে যদি গল্পটা আগে পড়ে না থাকেন তবে এই সংকলনের প্রথমেই এটি পড়বেন না| বরং অন্য কটা লেখা পড়ে নিজেকে তৈরি করে রাখুন এই ট্রিট-টির জন্যে|

(২) হাতে রইল তিন: প্রেম, বন্ধুত্ব, ঈর্ষা, আবেগ, যুক্তি, বুদ্ধি, হতাশা, লালসা, ক্রূরতা: এই সব কটি রঙের মিশেলে সেজে উঠেছে এই বইয়ের সবথেকে টানটান, ট্র্যাজিক, এবং প্যাশনেট এই গল্পটি| অন্য কোন লেখকের হাতে এই গল্প যা হতে পারত তা বোঝাতে আমরা চলতি বাংলায় ছড়িয়ে লাট কথাটি ব্যবহার করি, কিন্তু লেখক জমিয়ে দিয়েছেন| শুধু শেষের পাতাগুলোয় পৌঁছবার আগে কয়েকটা অনুচ্ছেদ যদি বাদ দেওয়া যেত...|

(৩) ননিগোপালের ভয়: ভূতের গল্প পড়ে ভয় পেতে চাওয়া পাঠকের আত্মারাম খাঁচাছাড়া করার মতো এই গল্পটি শুধু এই সংকলনের নয়, সাম্প্রতিককালে প্রকাশিত সেরা ভয়ের গল্প বলে পরিগণিত হতে পারে| গল্পের সবথেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় কিন্তু এটাই যে এই গল্পটি কঠোরভাবে লৌকিক, এবং এর শেষে যে রহস্যটা রয়েছে সেটা সমাধান করার মতো প্রচুর ক্লু লেখক দিয়েই রেখেছিলেন পাঠকের জন্যে|

(৪) জলযাপনের দিনগুলি: এক সাঁতার-ক্লাবের পটভূমিতে প্রেম, ক্রোধ, আর ঈর্ষার এই ঝাঁঝালো গল্পটিও পেশ করেছেন লেখক তাঁর ট্রেডমার্ক তথ্যগত নিষ্ঠা, বর্ণনার বাস্তবিকতা, চূড়ান্ত সাবলীল ভাষা, আর টানটান করে রাখা গতি দিয়ে| বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: গল্পটির সঙ্গে থাকা অলংকরণ দেখে কেউ যদি ভাবেন যে এটি একটি মজার গল্প, তাহলে ভয়ংকর রকম ভুল করবেন|

(৫) ননিগোপালের জুতো: গতবছরের শারদীয়া টগবগ-এর তিনটি সেরা লেখার মধ্যে ছিল এই লেখাটি, যার ছত্রে-ছত্রে মিশে গেছে নিখুঁত বর্ণনা, নিপুণ ব্যঙ্গ, দুরন্ত গতি, আর শেষে আক্ষরিক অর্থে মুখ হাঁ করিয়ে দেওয়া চমক! একবার পড়ুন, বারবার পড়ুন|

(৬) মেঘবরণ: এই গল্পটা নিয়ে আমি যাই লিখি না কেন, গল্পটা পড়ার পর চুপ করে বসে থাকা আমার মনের অবস্থাটা কিছুতেই বোঝানো যাবে না| শুধু এটুকু লিখি: রাগ-বিরাগ-সংরাগ দিয়ে গড়া এই গল্পটা পড়ার পর আপনিও চুপ করে বসে থাকবেন| হয়তো মনে-মনে আপনিও ভিজবেন সেই বৃষ্টিতে, যা মনের অব্যক্ত দুঃখ আর অনুতাপদের অবশেষে বেরিয়ে আসার সুযোগ করে দেয় নিজের আড়ালে অশ্রুকণাদের লুকিয়ে রেখে|

(৭) অ্যাটিনা: অলৌকিকের আড়ালের লৌকিক সত্যিটা কীভাবে প্রকাশ করতে হয়, সে ব্যাপারে লেখকের এই গল্পটিকে ভবিষ্যতে টেক্সট হিসেবে ব্যবহার করা হলে আশ্চর্য হব না| তবে কুকুর লেখকের (এবং আমারও) বড়ো প্রিয়, তাই জানিয়ে রাখি, মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে লেখা লেখকের সেরা লেখাটি কিন্তু এই বইয়ে নেই| শোধ নামের সেই গল্পটি এপার বাংলা ওপার বাংলা-য় সংকলিত, সম্ভব হলে খুঁজে নেবেন অবশ্যই|

তাহলে সব মিলিয়ে কী দাঁড়াল? দাঁড়াল এটাই যে প্রকাশকের অপেশাদারিত্ব আর পরিকল্পনার অভাবে যাঁরা বইমেলায় বিভা পাবলিকেশন-এর স্টলে গিয়েও বইটি পান নি, যাঁরা বইটি নিয়ে গত কদিনে ফেসবুক আর অন্যত্র হওয়া আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দোলাচলে ভুগছেন যে বইটা পাঠযোগ্য কি না, আর যাঁরা বইটার কথা প্রথম শুনলেন, তাঁদের সবার উদ্দেশ্যে বিনীত আবেদন: ৯১-৯৪৩৪৩৪৩৪৪৬ বা ৯১-৯৭৪৯৭০১৯৮৮-য় ফোন করে প্রকাশকদের উত্যক্ত করে বের করুন বইটা কোথায় পাবেন, হোম-ডেলিভারি সম্ভব কি না, বইটা বিদেশে পাওয়া যাবে কি না, ইত্যাদি, এবং তারপর বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে বইটা কিনে ফেলুন|


বিশ্বাস করুন, কেন বইটা নিয়ে এমন হাউমাউ করছি সেটা বইটা পড়ার পরেই বুঝবেন, আর তারপর আপনিও অন্য কোন পাঠককে সন্ধান দেবেন এই রুদ্ধশ্বাস সপ্তক-এর| তাহলে আর দেরি কেন? ফোন করুন, ফোন করুন! ইতিমধ্যে, সেলাম প্রসেনজিৎ!

Monday, 8 February 2016

মেলা বই, এবং....

প্রত্যেক বছর বইমেলা থেকে ফিরে আসার পর আমার একটা প্রগাঢ় ঝিমিয়ে পড়া দশা শুরু হয়, যার কারণ দ্বিবিধ: (১) অফিসের (বিশেষত যে মার্কামারা পিস্-টির অধীনে চাকরি করি) দশচক্র আমায় গিলে খাওয়ার জন্যে এই সময় ওত পেতে থাকে, (২) শুধু এই একটা সময়েই কলকাতায় থাকতে না পারা, ফলে আরও ক’দিন জমিয়ে আড্ডা না মারতে পারা নিয়ে আপশোস হয়| কাল ছিল মেলার দশমী, কিন্তু আমি সকালে যখন ট্যাক্সি চেপে পাতলা কুয়াশামাখা বাইপাস ধরে এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলাম তখন মিলনমেলা প্রাঙ্গন স্বাভাবিক ভাবেই শুনশান| তারপর প্লেন লেট করে গুয়াহাটি পৌঁছনো, অফিসে যাওয়া (গত সপ্তাহে দু’দিন অফিস করতে পারিনি, ফলে টেবিল উপচে ফাইল মাটিতে পড়ার অবস্থা হয়েছিল), ফাইলপত্তর সামলে কোয়ার্টারে ফেরা, এবং প্রিয় কাজটি করা, অর্থাৎ বুকশেলফে নতুন কেনা বইগুলো ভরা| পড়া শুরু করে দিয়েছি কাল রাত থেকেই, এবং নতুন কেনা একটা বই পড়ে নিজেকে প্রকৃষ্ট লম্বকর্ণ মনে হওয়ার অনুভূতি-লাভ হয়েও গেছে (“আগুন জ্বালো” টাইপের রিভিউ আসিতেছে অবিলম্বে)| কিন্তু তার আগে এটা বরং জানানো যাক যে আমি কী কী বই কিনলাম:


প্রকাশক
ক্রমাংক
বইয়ের নাম
লেখক/সম্পাদক
সৃষ্টিসুখ
নিভৃতে যতনে
রূপঙ্কর সরকার
নামান্তর
ষ্টারডাস্ট
সরিৎ চ্যাটার্জি
গল্পের খোঁজে
অদিতি ভট্টাচার্য
কৃতি বাঙালি বিস্মৃত বাঙালি
সব্যসাচী সান্যাল
পাঁচ কথা
জয়ঢাক সংকলন
বিভা
রুদ্ধশ্বাস সপ্তক
প্রসেনজিৎ বন্দোপাধ্যায়
সহজ পাঠ
দাম সিং
তাপস মৌলিক
কবিতা পাক্ষিক
দশ এক্কে দশ
জয়দীপ চক্রবর্তী
১০
ভূতভূতুনির গল্প
(স) –ঐ-
সী
১১
অদৃশ্য লিপির ফাঁদে
অনন্যা দাশ
কথাসত্য
১২
রক্তকস্তুরি
সৈকত মুখোপাধ্যায়
উদয়ারুণ
১৩
তিনু তান্ত্রিকের পুঁথি
১৪
সাধুডাকাত
জয়ন্ত দে
১৫
দেবদেউলের প্রহরী
বাসুদেব মালাকার
১৬
গণপতি হাজরার সোনার মেডেল
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
নিউ স্ক্রিপ্ট
১৭
নারায়ণকোটের জহরত
অমিতানন্দ দাশ
১৮
মেয়েরা যখন গোয়েন্দা
(স) নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
সংসদ
১৯
পাথরের চোখ
শিশির বিশ্বাস

২০
সন্দেশ ১০০ গল্প একশো
(স) প্রসাদরঞ্জন রায়
মেইনস্ট্রিম
২১
চতুষ্পাঠী
অরুণিমা রায়চৌধুরী
২২
গোয়েন্দা গনেশ হালদার: ১
রাধারমণ রায়
২৩
-ঐ: ২
২৪
-ঐ-: ৩
২৫
-ঐ-: ৪
২৬
-ঐ-: ৫
পত্র ভারতী
২৭
মরণবিভা
সৈকত মুখোপাধ্যায়
২৮
কবিতা গল্প অল্প অল্প
(স) সুরজিৎ ও বন্ধুরা
২৯
হ্যাঁচ-চ্ছো
উল্লাস মল্লিক
৩০
চন্দ্রভাগার চাঁদ
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
৩১
মৃত, না জীবিত
জয়ন্ত দে
৩২
একটা খুনি চাই
৩৩
সাবধান! সাসপেন্স!
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়
৩৪
শ্রীমান বিচ্ছু
৩৫
ক রহস্য
অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী
৩৬
গোপন বাক্স খুলতে নেই
প্রচেত গুপ্ত
৩৭
সেরা গোয়েন্দা উপন্যাস
অদ্রীশ বর্ধন
৩৮
জলের তলায় আতঙ্ক
দীপান্বিতা রায়
৩৯
ছায়ামারীচের প্রেম
নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়
৪০
শতবর্ষের সেরা রহস্য উপন্যাস: ৩
(স) অনীশ দেব
৪১
কিছু মেঘ কিছু কুয়াশা
(প) অনীশ দেব
৪২
তুষারচিতার সন্ধানে
কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
সুচেতনা
৪৩
পংখিলালের গুহা
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
আনন্দ
৪৪
ইচ্ছেপলাশ
৪৫
জীবন অথবা
সৌরভ মুখোপাধ্যায়
৪৬
তবু অনন্ত জাগে
ইন্দ্রনীল সান্যাল
৪৭
পঞ্চাশটি গল্প
কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
৪৮
পঞ্চাশটি গল্প
ঋতা বসু
৪৯
প্রবন্ধ সংকলন: ২
সুকুমার সেন
৫০
এপিঠে মজা ওপিঠে ভয়
দীপান্বিতা রায়
৫১
এক কুড়ি এক হাসির গল্প
দীপংকর বিশ্বাস
শিশুকিশোর
৫২
এক বাক্স উপন্যাস-২
তিনটি উপন্যাসের সংগ্রহ

সি.ই.এস.সি থেকে প্রিভিলেজ কার্ড আদায় করা সত্ত্বেও মানিব্যাগ যা চোট খেয়েছে, তা সামলাতে বহুদিন লাগবে| তার মধ্যেও এটা মাথায় রয়েছে যে পায়ের ছাল উঠে যাওয়ার অবস্থা হওয়ায়, কোন-কোন স্টলে সেলিব্রিটির ভিড় থাকায়, এবং পাতি ক্লান্তির বশে বেশ কয়েকটা স্টলে যেতে পারিনি| অর্থাৎ, সেই স্টল থেকে যে বইগুলো কেনার কথা ছিল, সেগুলো পরের কলকাতা সফরে কলেজ স্ট্রিটে গিয়ে কিনতে হবে| এতটাই যখন লিখলাম তখন কী বাকি রয়ে গেল সেটার ফিরিস্তিও দিই:

প্রকাশক
ক্রমাংক
বইয়ের নাম
লেখক/সম্পাদক
দে’জ
অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস সমগ্র: ১
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
পাঁচ মিতিন
সুচিত্রা ভট্টাচার্য
খুনিরা পাঁচজন
গৌতম রায়
ছায়াপুতুলের খেলা
রবিশংকর বল
কুসুমে রক্তের দাগ
পার্থ বন্দোপাধ্যায়
সোনার পশুপতি
রহস্যের পাঁচ কাহন
চিন্ময় চৌধুরী
পাঁচটি উপন্যাস
স্বপ্নময় চক্রবর্তী
উজ্জ্বল
স্যার সত্যপ্রকাশ অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র: ১
স্বপন বন্দোপাধ্যায়
প্রতিভাস
১০
রহস্যের রানি আগাথা কৃষ্টি
প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত
দেব সাহিত্য কুটির
১১
শুকতারার ১০১ ভূতের গল্প: ৩য় খণ্ড
(সংকলন)
সপ্তর্ষি
১২
আয়না মানুষ
বিশ্বদীপ দে
তালপাতা
১৩
কল্কেকাশির গল্প-সংকলন
শিবরাম চক্রবর্তী
সাহিত্যম
১৪
খুনির রং
(স) অনীশ দেব
১৫
বেলা শেষের আলো
হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
১৬
গা ছমছমে ভৌতিক-অলৌকিক গল্প
মিত্র ঘোষ
১৭
একডজন চার কিশোর
কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়
১৮
ক্যালাইডোস্কোপ
ইন্দ্রনীল সান্যাল
১৯
আজব কারখানা
নবনীতা দেবসেন
দীপ
২০
ছ’টি গ্রাফিক নভেল
নারায়ণ দেবনাথ
বিশ্বভারতী
২১
ভারত-সংস্কৃতি
বিশ্ববিদ্যাসংগ্রহ
২২
জ্যোতির্বিজ্ঞান
২৩
গণিতবিদ্যা


এ মাসে যেহেতু ট্যাক্স কাটার ব্যাপার আছে, তাই মাসান্তে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে| তবু, যদি আগামী মাসে একবার কলকাতা যেতে পারি, তাহলে “মা কসম”, উপরোক্ত বইগুলো কিনবই! ব্লগ-পাঠকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার|