- বইয়ের নাম: পাহাড়ের মানুষ পাহাড়ের গল্প
- লেখক: গৌতম চক্রবর্তী
- প্রকাশক: দ্য কাফে টেবল
- পেপারব্যাক, ১৩৬ পৃষ্ঠা, ১৫০/- টাকা
এক-একটা বইয়ের রিভিউ হয়
না।
সেই বইয়ে আলাদা করে
থাকে না কোনো নায়ক, প্রতিনায়ক, বা নায়িকা।
সেই বইয়ে তেমন কোনো
গল্পও থাকে না আলাদা করে।
অথচ, তার পাতায়-পাতায়
ছড়িয়ে থাকে জীবনের মহীরুহ থেকে ঝরে পড়া অনেক শুকনো পাতা, আর ভেজা গন্ধ।
তার দু’মলাটের মধ্যে
ধরা থাকে অনেক হাসি আর হইচই-এর আওয়াজ, অনেক কান্নার শুকনো দাগ, অনেক স্বপ্ন ভেঙে
যাওয়ার ব্যথা, অনেক না-বলা রোমান্স, অনেক-অনেক লড়াই।
আর দুর্জয় আশা।
কী বলা যায় তেমন বইকে?
দিনলিপি? রিপোর্টাজ?
অলীক কথন?
মাত্র ১৩৬ পৃষ্ঠার,
দেড়শো টাকা দামের যে বইটি নিয়ে আজ লিখতে বসেছি, সেটি বোধহয় ওই শেষ বর্গে
শামিল-যোগ্য।
কল্যাণ দাস-এর আঁকা
পাহাড়ি কুয়াশার মতো আধেক জমাট, আধেক ধোঁয়াটে ছবিগুলোয় সাজানো, ছোটো-ছোটো ৩২টি
ভিনিয়েট (vignette) নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বইটি।
এতে উঠে এসেছে পাহাড়ের মানুষের সরল, সৎ, পরিশ্রমী, কখনও-হার-না-মানা মনোভাব, তাদের
জীবনসংগ্রামের বিচিত্র গল্পকথা, তাদের হার আর জিৎ।
তার সঙ্গেই, প্রতি পদে, এই লেখাগুলো বুঝিয়ে
দিয়েছে, শহরের অর্থ আর আলোয় ঠাসা আমাদের জীবন আসলে কতটা ফাঁপা, আর ক্ষেত্রবিশেষে নিরর্থক।
সংসারত্যাগী সন্ন্যাসীর মতো আকাশপানে চেয়ে থাকা
ওই পাহাড়ের কোলে যারা থাকে, তাদের সঙ্গে আমাদের মিলের চেয়ে অমিল বেশি হওয়াটাই
স্বাভাবিক। কিন্তু এখন, যখন সেই পাহাড়ে শান্তি রাখতে গিয়ে, কিছু লোভী আর ধান্দাবাজ
মানুষের ক্ষমতার খেলায় বোড়ে হয়ে ঝরে যাচ্ছে অমিতাভ
মালিকের মতো তাজা প্রাণ, তখন এই বইটাই আঁকড়ে ধরতে ইচ্ছে হল বড়ো বেশি করে।
ভীষণ সহজ ভাষায় আর
ভঙ্গিতে লেখা, পাহাড়ের মানুষের এই চাওয়া-পাওয়া, আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নভঙ্গ, হেরেও ফিরে
আসার কথাগুলো পড়ে মনে হল, বারুদের গন্ধ বা রক্ত নয়, নীল আকাশের বুকে মাথা তোলা
কাঞ্চনজঙ্ঘা আর সবুজের বুক চিরে ছুটে যাওয়া তিস্তা-রঙ্গিতের মাঝের পৃথিবীর
মানুষগুলোকেই যেন আবার অনুভব করলাম।
ধন্যবাদ কাফে টেবল।
আপনারা এগিয়ে না এলে আমরা এই সরল, নিরহংকার, অভিমানী লেখাগুলো ছাপার অক্ষরে পেতাম
না।
শুধু পরের বার
টাইপোগুলো শুধরে নেবেন। এমন গৈরিকবসন বইয়ে ওই মালিন্য মানায় না।
No comments:
Post a Comment