ধরে নিন, আপনি একজন ‘ভদ্রলোক/ভদ্রমহিলা’, যিনি নিজে কাউকে
ঝামেলায় ফেলেন না, আবার কেউ আপনাকে ঝামেলায় জড়াক, সেটাও চান না।
ট্রেনে বা বাসে আপনি দেখলেন, কোনো অভাগিনী শিকার হচ্ছে কালো
হাত আর ততোধিক কালো দৃষ্টির, অথবা নিরীহ একটা ছেলেকে অকারণে যাচ্ছেতাই অপমান করছে
কেউ। কখনও বা অফিসের ঘেরাটোপে দেখলেন কোনো স্যাডিস্টকে, অন্যকে কষ্ট দেওয়ার
ব্যাপারে যার কুশলতা দেখলে দুঃশাসন দ্রৌপদীর দিকে হাত বাড়ানোর আগে ক’টা দিন তার
আন্ডারে কোচিং নিত।
তখন আপনার কী করতে ইচ্ছে হয়?
ঘাবড়াবেন না। আমি আপনাকে ডান্ডা হাতে “ত্বয়া হৃষীকেশ” বলে
ফিল্ডে নামতে বলছি না।
বাবা লোকনাথ নাকি রণে-বনে স্মর্তব্য। কিন্তু এই আধুনিক
চক্রব্যূহে ঢুকে পড়া সৎ, নির্বিরোধী, অথচ “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব
ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে” মন্ত্রে বিশ্বাসী একাকী অভিমন্যুদের জন্য এবার এল এক
নতুন প্রফেট, তার নিজস্ব দাওয়াইয়ের সঙ্কলন নিয়ে।
শান্ত!
ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, ফেসবুকের মাধ্যমে, রাজা
ভট্টাচার্য-র আশ্চর্য সৃষ্টি এই নিপাট ভালোমানুষটির কীর্তিকলাপ আপনারা অনেকেই পড়েছেন।
এই ছোকরা, ও তার অদৃশ্য অবতার কাটা বল্টু-র দাপট দেখে আমরা ইতিমধ্যেই মুগ্ধ হয়েছি,
হেসেছি, হয়তো কেঁদেছি কখনও...
আর হাত মুঠো করে ভেবেছি, অবকি বার, শান্ত-কে দরকার!
যাঁরা এখনও শান্ত-কে চেনেন না, তাঁদের জন্য রাজা
ভট্টাচার্য-র অকপট ও অনাবিল “লেখকের কথা” থেকে কিছুটা তুলে দিই বরং, যাতে
ব্যাপারটা কিঞ্চিৎ স্পষ্ট হয়।
“... জাতের নামে বজ্জাতিই হোক, আর পণের নামে ভিক্ষাবৃত্তি;
যত্রতত্র ময়লা ফেলাই হোক বা বাচ্চাদের খেলার মাঠ কেড়ে নেওয়া – আমার সমস্ত বিরক্তি
আর ঘৃণা বাঁকা পথে বেরিয়ে এল প্রতিশোধ নিতে, প্রতিবাদ করতে।
আমার মতো হাজারো মানুষ – যারা সহ্য করতে বাধ্য হন এমনই শতেক
বর্বরতা – তাঁদের প্রত্যেকের ‘অল্টার ইগো’ এই সাদামাটা ছেলেটা। তার না আছে দল, না
আছে বল, না আছে নেতা, না আছে অভিনেতা। আছে শুধু ন্যায্য কথা মুখের ওপর বলে দেওয়ার
ক্ষমতা। মুখের ওপর – কিন্তু বাঁকা পথে। সে এমনই কথা – যাকে ‘না যায় ছাড়ানো, না যায়
এড়ানো’।
হে শান্ত-প্রেমী জনগণ, আপনাদের (আইজ্ঞা হ, তার মধ্যে আমিও
আছি বটে) সবার খ্বোয়াইশ পুরো করতে বইমেলায় এগিয়ে এসেছিল ‘দ্য কাফে টেবল’। তাদের তত্ত্বাবধানে
শান্তর বাছাই করা কিছু আখ্যানমালা ধরা পড়েছিল দু’মলাটের মধ্যে, ১২০ পৃষ্ঠার, ১৫০/-
টাকার এই ঝকঝকে পেপারব্যাকে। অনেক মর্ষকামী বিমর্ষর মুখে ঝামা ঘষে দিয়ে বইটা হু-হু
করে বিক্রি হয়েছিল, ও হচ্ছে।
খুঁটিয়ে দেখলে বইটা নিয়ে কিছু ঘ্যানঘ্যান করাই যায়, যেমন: -
®
বেশ কিছু মুদ্রণ প্রমাদ ও কী/কি সংশয় একে ক্লিষ্ট করেছে,
®
কল্যাণ দাস-এর অলঙ্করণ ক্যারিকেচার-সুলভ বলে প্রতিটি গল্পেই মাখনের মতো হাসির আড়ালে
লুকোনো ছুরিটার অস্তিত্ব লঘু হয়ে গেছে, এক্ষেত্রে মডেল হিসেবে ‘কাণ্ডজ্ঞান’ ও
অন্যান্য কলামে অহিভূষণ মালিকের আঁকা অবিস্মরণীয় ছবিগুলোর দিকে আমি লেখক ও শিল্পীর
দৃষ্টি আকর্ষণ করছি;
®
এই লেখাগুলোর প্রকাশের তারিখ একটু কষ্ট করে দেওয়াই যেত, তাতে সেগুলো
কালানুক্রমিক ভাবে সাজানোও যেত।০
কী কী গল্প(-হলেও-সত্যি) আছে এতে? সূচিপত্র পেশ করা যাক।
১. প্রশংসা
২. পরিচয়
৩. শব্দজব্দ
৪. কৃপণ
৫. মাঠ
৬. বোমা
৭. পঞ্চবার্ষিকী
৮. ভোটের লাইনে
৯. আঘাত
১০. মৃত্যুভয়
১১. ফ্রি-গিফট
১২. ডিপ্রেশন
১৩. ভাগ
১৪. বুলি ও গালি
১৫. সম্বোধন
১৬. প্রথা
১৭. পণ
১৮. প্রত্যক্ষ
১৯. মার
২০. নেশা
২১. লুডো
২২. প্রমাণ
২৩. খিল্লি
২৪. কর্মসংস্কৃতি
২৫. আদুরে
২৬. ছোঁয়াচ
২৭. গান
২৮. দেখা
২৯. জুতো
৩০. ডাস্টবিন
৩১. খুনি
একটা সময় সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়-এর “রসেবশে” কলাম পড়ে লক্ষ-লক্ষ
বাঙালি তাঁদের মলিন ও শতচ্ছিন্ন পোশাক-কে ‘ওয়েল ভেন্টিলেটেড’ জেনে ফুরফুরে থাকার
মন্ত্র পেয়েছিলেন। ফেসবুকে সেই কাজটাই করে চলেছে শান্ত।
আসুন, তার অ্যাডভেঞ্চারগুলো পড়ে ফেলি, ভাবি, “এখানে শান্ত
থাকলে কী করত?”, আর পরের বার যখনই কোনো অন্যায় দেখব তখনই ...!
No comments:
Post a Comment